Sunday 19 July 2015

অন্য ভূবনে ভালবাসা মা-ছেলে

একটা সিনেমা দেখছিলাম। সিনেমার নাম দাম লাগাকে হাইশা। একটা মোটা মেয়েকে নায়ক আয়ুস্মান খুরানা বিয়ে করে বাবা মার চাপে পড়ে। মেয়ের সব কিছুই ঠিক আছে, শুধু মেয়েটা একটু মোটা, তাই এ বিয়েতে নায়ক খুশি নয়। নায়ক সাহেব একটা ক্যাসেটের দোকানের ব্যবসা করে। পৈতৃক সূত্রে।

মুভিটার পটভূমি নাইন্টিজের। তখন কুমার শানুর জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। এই ছবিতে কুমার শানুর একটা গানও আছে। সেটার নিচে ইউটিউব কমেন্টে লিখেছে, কুমার শানুস ভয়েজ ইজ লাইক মেল্টেড সুইট চকলেট ফর দা ইয়ার। কথাটা সত্যিও। মুভিটা কেমন সেটা আমরা কেউই জানতাম না। মুভিটার মূল মার্কেটিংই ছিল যে নাইন্টিজকে আবার ফেরত আনা হচ্ছে এই মুভিতে। অ্যাডে কুমার শানুর গান, পটভূমি প্লট, সিংক্রোনাইজড ড্যান্স এসবই ইন্ডিকেট করে যে এই মুভিটা বহুদিন পর সে সময়ে নিয়ে যাবে দর্শককে।

সে বিশ্বাস থেকেই আম্মু আর আমি দুজনে একসাথে বসে সিনেমাটা দেখা শুরু করি। সিনেমার এক পর্যায়ে দেখানো হয় যে, নায়িকাকে নায়ক পছন্দ করে না বলে সেক্স হয় না তাদের মাঝে। নায়কের কোন আকর্ষণই নেই তার দিকে। তাই সে সেক্সি ম্যাক্সি আর ইংরেজি সিনেমা এনে নায়ককে উত্তেজিত করার চেষ্টা করে। বেডরুমের ভেতর থেকে ক্যামেরা বাইরে চলে আসে। বারান্দায় ছেলের বাবা মা বসে বসে ভেতরের বিছানা ক্যাঁচ ক্যাঁচ করার শব্দ শুনছে। বাবা তখন বলছে, দেখেছ, তোমার ছেলে আজ জোয়ান বন গায়া।

আম্মুর সাথে আমি অনেক বিষয়েই ফ্রি। কখনো কোন কিছু লুকাতে কিংবা কোন বিষয়ে সংকোচ করতে আম্মু আমাকে শেখায় নি। যে কোন বিষয় নিয়েই আম্মুর সাথে ফ্রিলি কথা বলা যায়। কিন্তু এই সিনটা চলে আসার সাথে সাথেই আমরা দুজন একটু আনকমফোর্টেবল হয়ে গেলাম। রিমোট আমার হাতে ছিল, কিন্তু তবুও টেনে দিলাম না। আসলে টেনে দেব কি দেব না সেটা ঠিক করতে পারছিলাম না। সিনটা খুব দ্রুতই শেষ হয়ে গেল। আম্মু শুধু পাশ থেকে ফোড়ন কাটল, আমার ছেলেটাও জোয়ান হয়ে গেছে।

আমি ভীষণ লজ্জা পেলাম। কি বলব ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম। জোয়ান হয়ে গেছে, কথার মানে কি? অবশ্যই এই কনটেক্সট থেকে বোঝাই যায় যে আম্মু কি ইন্ডিকেট করেছে। কিন্তু কেন? আমি কেবল ক্লাস এইটে উঠেছি। বিয়ে শাদী বা অন্য কিছুর তো প্রশ্নই আসে না। হ্যাঁ লুকিয়ে পর্ন দেখি, সবাই দেখে। কিন্তু আম্মু কি সেটা টের পেয়ে গেছে? শিট!
বাকি সিনেমাটায় আর কনসানট্রেট করতে পারলাম না।

গত জন্মদিনে আপু আমাকে একটা ডায়রি দিয়েছিল। কখনো কিছুই লেখি নি। ডায়রি লেখার অভ্যেস কি এখনো আছে কারো? আপু যখন আমাকে ডায়রিটা দেয়, প্রমিজ করিয়েছিল ডেইলি অন্তত একটা পাতা হলেও যাতে লিখি। হয়ে ওঠে নি। আজ থেকে লেখা শুরু করলাম। চেষ্টা করছি, প্রতিদিন এক পাতা করে লিখব। আপু অবশ্য কিছু জিজ্ঞাসা করে নি এখনো। আমিও কিছু বলি নি। কিন্তু এভাবে আপুকে ঠকানো ঠিক হচ্ছে না।

আচ্ছা যদি আমি কোনদিন বিখ্যাত হয়ে যাই, তখন কি আমার ডায়রিটা প্রকাশিত হবে? সবাই পড়বে? আমার বোধহয় এভাবে লেখা ঠিক হচ্ছে না। যে কেউ চাইলে পড়ে ফেলতে পারে আমার ডায়রি। তাহলে তো এটা এভাবে অরক্ষিত ভাবে রেখে দেয়া ঠিক না। আমার কি এভাবে প্রতিদিনের ঘটনা আর সেসম্পর্কে আমার মনের ভাব লিখে রাখা উচিত? আর লিখলেও সেটাকে এভাবে কাগজের পাতায় ওপেনলি রেখে দেয়া উচিত? সলিউশন প্রয়োজন।

ও দারুণ একটা গেম বের হয়ে গেছে। কাল থেকে ওটা খেলা শুরু করব বলে ভাবছি। কম্পিউটারটা মোটামুটি ফাঁকাই থাকে আপু না থাকায়। গরমের ছুটিতে তাই কম্পিউটারটার ওপর পুরো কর্তৃত্ব আমারই। ভাবতেই ভাল লাগছে।২রা জুন, ২০১৫

আজকের সারাটা দিন আনইভেন্টফুল। কিছুই করি নি সারাদিন গেম খেলা ছাড়া। আম্মুও সারাটা দিনই ব্যস্ত, রান্না ঘরে কিসব ঘষামাজা করেছে। আমিও কয়েকবার উকি ঝুঁকি মেরে দেখে এসেছি, তেমন কোন কথা হয় নি। দিনটাও খুবই বোরিঙ, আবার এক্সাইটিং ও বটেই। কারণ, গেমটার অনেকদূর শেষ করে ফেলেছি। তবে খারাপও লাগছে, নতুন গেম আবার কবে আসবে। গেম কেনা এখন বিশাল ঝামেলার কাজ। বেশিরভাগ গেমসই কম্পিউটারে ইন্সটল হতে চায় না। অনেক গুঁতোগুতি করে ইন্সটল করার পর আর খেলার ধৈর্য থাকে না। ভাবছি একটা কনসোল কিনে ফেলব। পিএস ফোর নাকি এক্সবক্স ওয়ান? এটা একটা বিগ ডিলেমা।
আকাশ পাতাল ভাবতেই একসময় আম্মু এসে রাতের খাবারের জন্য ডেকে গেল। ডিনার টেবিলে আম্মু আর আমি নিঃশব্দে খাচ্ছিলাম। মাঝপথে আম্মু বলল, আজকে কোন ছবি দেখবি না? আমি এবার একটু খুশি হয়ে বললাম, কি দেখবে বল। আম্মু বলল, বাহ, আমি কি জানি নাকি। তোর যেটা পছন্দ। আমি বললাম, বেশিরভাগই তো দেখা হয়ে গেছে। আম্মু বলল, তার মানে কি আর কোন মুভি বাকি নেই দেখার? আমি বললাম, তা আছে, কিন্তু সেগুলোতে একটু অন্যরকম সিন আছে, যেগুলো তোমার সাথে দেখা যাবে না। আম্মু বলল, কেন, আমার সাথে দেখলে সমস্যাটা কোথায়? আমি বললাম, তাই? সত্যি সমস্যা নেই? বলছ তো? ঠিক আছে। ছাড়ব। তখন আবার যেন অন্য কিছু বলে বসো না। তুমি তো চান্স পেলেই খোঁচা দেবে। আম্মু বলল, বাহ, কালই তো তুই যা দেখালি, তু তো অলরেডি মর্দ বন গায়া, মেরি বেটা!
আম্মু আর আপুর এই বাজে স্বভাবটা আছে, কথায় কথায় হিন্দিতে ডায়লগ ছাড়ে। গা ঘিন ঘিন করে বাঙালিদের কণ্ঠে হিন্দি শুনলে। আম্মু ব্যাপারটা ভাল করেই জানে, তাই আম্মু আর আপু মিলে আরো বেশি করে আমার সাথে হিন্দি বলে আমাকে ক্ষেপাবার জন্য।
আমার এখন রাগ করা উচিত, ভীষণ রাগ করা উচিত। টেবিল চেয়ার প্লেট সব উল্টে ফেলে উঠে যাওয়া উচিত। কিন্তু কিচ্ছু বললাম না, রাগটাকে ভাতের সাথে মেখে গিলে ফেললাম।
খাবার পর আম্মুকে ডিশওয়াশ করতে একটু হেল্প করলাম কিছুক্ষণ। আম্মু বলল, তুই যা, ড্রইংরুমে বসে আগে টিভিটা ঠিক করে একটা ভাল মুভি ছেড়ে রাখ। আমি আসছি। আমি ড্রইংরুমে গিয়ে টিভির সোর্স চেঞ্জ করে মুভি সিলেক্ট করতে শুরু করলাম।
আম্মু ফ্রেঞ্চ ভাষা জানে। বিয়ের আগে থেকেই আম্মু ফ্রেঞ্চে বিশেষ দক্ষ। ফ্রেঞ্চ একটা মুভি আছে, নাম ডোন্ট লুক ডাউন। আমি আগেই দেখে ফেলেছি, মুভিটা ভালই, কিন্তু সেটার মাঝে মুভির নায়ক আর নায়িকা ইফেক্টিভলি পুরোটা সময়ই নগ্ন থাকে। এই মুভিটা দিয়েই আম্মুকে এমব্যারাস করব। খুবই আনরিয়েলিস্টিক প্ল্যান। দেখি আম্মু কি বলে। চূড়ান্ত এমব্যারাস করে ছাড়ব।
মুভিটা ছেড়ে বসে রইলাম। কিচেনে আম্মুর ডিশওয়াশ প্রায় শেষ, শব্দ থেকে বোঝা যাচ্ছে। আম্মুর ফুটস্টেপ আস্তে আস্তে এগিয়ে আসছে ড্রইংরুমের দিকে। আমার বুক ঢিপ ঢিপ করছে। আম্মু এই মুভি দেখে সহজভাবে নেবে তো? যদি না নেয়? যদি খুব ক্ষেপে যায়? যদি না ক্ষেপে তাহলে অবশ্য খুব ভাল হবে।
আচ্ছা, যদি না ক্ষেপে তাহলে কি হবে? আম্মু কি সহজভাবে নেবে নাকি হর্নি হয়ে যাবে? এই মুভি দেখে যে কোন মেয়ে হর্নি হতে বাধ্য। তের আর উনিশ বছরের দুটো সন্তান আছে যার, তার বয়স খুব বেশি হলে সাঁইত্রিশ হবে। আম্মুর বয়স এখন ঠিক সাঁইত্রিশ। এ বয়সে কি মেয়েদের সেক্স কমে যায়? নাকি বেড়ে যায়? আম্মু কি সেক্সুয়ালি এখনো একটিভ? ধ্যাত! কিসব ভাবছি এসব।
ভাবনার লাগাম টেনে ধরলাম। নাহ, এই মুভি দেখা যাবে না। আম্মু আস্তে আস্তে কিচেন থেকে ড্রইংরুমের দিকে আসছে। এখনো দেখে নি টিভিতে কি ছেড়ে রাখা। আমি দ্রুত মুভিটা বন্ধ করে দিয়ে নতুন মুভি খুঁজতে শুরু করলাম। আম্মু হেঁটে আমার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলল, কি রে এখনো ঠিক করতে পারিস নি কোনটা দেখবি? উফ! তাড়াতাড়ি ঠিক কর, না করতে পারলে আমাকে দে।
আমি হাঁ করে আম্মুর দিকে তাকিয়ে রইলাম, আম্মুর এই প্রথমবার আম্মুর পরনের শাড়ি ভেদ করে শরীরটা কেমন হতে পারে এই কল্পনাটা আমার মাথায় এল। এক মুহূর্তের জন্য আম্মুকে নগ্ন কল্পনা করলাম। আম্মু আমার সামনে যেন নগ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে আমার দিকে হাত বাড়িয়ে রিমোটটা চাইছে। সেই একই ভঙ্গিতে। গলায় সেই চেইন, চুল একই ভাবে খোঁপা করে রাখা। ভরাট ফর্সা দুটো স্তন, ফর্সা পেট, নাভির নিচের তলপেটে হালকা চর্বি আর তার নিচেই হালকা কাল বালে ঢাকা ত্রিকোণাকার …
কি রে! হাঁ করে আছিস কেন? আম্মুর নাড়া খেয়ে বাস্তবে ফিরলাম। আমি দ্রুত নিজেকে সামলে নিলাম। চোখ কচলে আম্মুর দিকে রিমোটটা এগিয়ে দিয়ে আবার তাকিয়ে দেখলাম আম্মুর দিকে। আম্মুর পরনে সেই আটপৌরে শাড়িটাই। চুল গুলো ছেড়ে দিয়েছে এখন। ক্লান্তির ছাপ পড়েছে শরীরে।
কিছুক্ষণ আগের চিন্তা ভাবনাগুলোর জন্য আমার নিজেকে লাথি মারতে ইচ্ছে করল। ছিহ্। কি সব বাজে চিন্তা আসে আমার মাথায়। নিজের মাকে নিয়ে আবার তাও। জঘন্য। এক ধরণের হীনমন্যতা আর অপরাধবোধ গ্রাস করে নিল আমাকে। আম্মু যথারীতি একটা হিন্দি মুভি ছাড়ল। খুবই বাজে মুভি, অ্যাকশন জ্যাকসন। আমি হলফ করে বলতে পারি, বলিউডে এত বাজে কোন ছবি আর কখনো তৈরি হয় নি, হবেও না। জোকার নামের মুভিটা এতদিন সবচেয়ে বাজে ছিল, কিন্তু এই অ্যাকশন জ্যাকসন নামের বালটা সবকিছুকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। কোনমতে মুভিটা শেষ হলে আমি রুমে চলে এসে লিখতে বসলাম। গা ঘিন ঘিন করছে। নিজের ওপর ঘেন্না হচ্ছে। এসব বাজে চিন্তার জন্য। বাজে মুভি দেখে।দা কোয়াইট

৩রা জুন, ২০১৫
গতকালের সেই বাজে ব্যাপারটার পর থেকে আমার মাথা পুরো ওলট পালট হয়ে আছে। নিজেকে আমার কি শাস্তি দেয়া উচিত, সেটা ভেবে পাচ্ছিলাম না। আর সবচেয়ে বাজে ব্যাপারটা হল, এই বাজে চিন্তাটাও মাথা থেকে দূর করতে পারছি না। যত দূর করার চেষ্টা করছি, ততবেশি জেঁকে বসছে।
আমার কি এ বিষয়ে আপুর সাথে কথা বলা উচিত? গরমের ছুটি তো মাত্র শুরু হল। গেম খেলে আর সিরিয়াল দেখে ছুটিটা কাটিয়ে দেব ঠিক করেছিলাম।
আজ সকালে ওঠার পর থেকেই আম্মুকে খেয়াল করলাম, বেশ আমুদে মুডে আছে। দুপুরে বের হয়েছিল শপিঙে। একগাদা জামাকাপড় কিনে এনেছে। আমাকেও নিয়ে যেতে চেয়েছিল, কিন্তু আমি যাই নি। জিজ্ঞাসা করেছিল কিছু লাগবে কি না। আমি বলেছি পরে কিনে নেব। আম্মুর সাথে শপিং করতে যাওয়া মানে আমাকে ব্যাগ গুলো হাতে আম্মুর পেছন পেছন হাটতে হবে সারা দিন।
সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে আসার পর দেখি আম্মু বাইরে থেকে খাবার নিয়ে এসেছে। আমাকে খেতে ডাকল। বলল, বাইরে থেকেই খেয়ে আসব ভেবেছিলাম, কিন্তু তুই তো আর সাথে ছিলি না, তাই নিয়ে এলাম সাথে করে। খেতে আয়। ঠান্ডা হয়ে যাবে। আমি কম্পিউটার গেমটা পজ দিয়ে খেতে চলে গেলাম।
খাবার টেবিলে যথারীতি আম্মু কথাবার্তা চালিয়ে গেল, আমি হুঁ হাঁ করে জবাব দিয়ে গেলাম। খাওয়া শেষে হাত ধোবার আগে আম্মু আমাকে বলল, কি হয়েছে তোর? কোন সমস্যা?
আমাদের পরিবারে এধরনের কথাবার্তা খুবই অস্বাভাবিক। যখন থেকে বুঝতে শিখেছি, আম্মু আমাদের এমনভাবে বড় করেছে যে কখনো কোনকিছু আম্মুর কাছ থেকে লুকোতে হয় নি। কিংবা কখনো লুকোতে হয় নি। আম্মু আমাদের বন্ধুর মত, যাকে যে কোন বিষয়ে মন খুলে সবকিছু বলা যায়। কিন্তু তাই একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললাম, না আম্মু কিছু না। কিছু হাবিজাবি ব্যাপার নিয়ে নিজের ওপরই মেজাজ খারাপ। আম্মু আমার পাশে এসে বসে বলল, আমাকে বলতে তো বাধা নেই, তাই না?
আমি হেসে বললাম, না আম্মু, তেমন কিছু না। বাদ দাও। আম্মু আর আমাকে জোর করল না। বলল, ঠিক আছে, নিজে নিজে ব্যাপারটা সলভ করতে পারলে কর। আমার সাথে এরকম কেন করছিস। বুঝতে পারলাম আম্মু মাইন্ড করেছে। আসলে আমারও দোষ আছে। আমার উচিত ছিল আম্মুর সাথে বের হওয়া। আর সারাদিন হাসিখুশি থাকা আম্মুকে হঠাৎ এরকম হয়ে যেতে দেখে আমার খারাপ লাগতে শুরু করল।
মনে হল, ব্যাপারটা বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে।
খাবার পর, ড্রইংরুমে গিয়ে বসলাম টিভির সামনে। আমাদের বাসার ডেইলি রিচুয়াল। মুভি বা সিরিয়াল কিছু একটা দেখা হবে। আম্মুকে বললাম, তুমি বল কি দেখবে আজকে। তারপর হেসে হাত জোর করে বললাম, প্লিজ তবে দয়া করে অ্যাকশন জ্যাকসন ছেড়ো না।
আম্মু হেসে বলল, মুভিটা তো এত্তো খারাপ না তুই যেভাবে বলছিস। বলিউডে এরচেয়েও বাজে মুভি হয়েছে, হয় নি বল? আমি বললাম, তা হয়েছে, কিন্তু এগুলো তো আস্তে আস্তে তামিল মুভির মত জোক্সে পরিণত হচ্ছে। আম্মু এবার সিরিয়াস হয়ে বলল, আরে এগুলো তো বানানোই হচ্ছে যাতে তুই দেখে মজা পাস। এক ঘুষিতে ত্রিশজন মানুষ উড়ে পড়ে যাচ্ছে, এটা যে আনরিয়েলিস্টিক, এটা কি ওরা বোঝে না বলতে চাস? এই গুলো বানাচ্ছেই এন্টারটেইনমেন্টের জন্য। আর ফিল্ম সের্ফ তিন চিজো কি লিয়ে চলতি হ্যায়, এন্টারটেইনমেন্ট, এন্টারটেইনমেন্ট এন্ড এন্টারটেইনমেন্ট।
আমি আম্মুকে থামাবারে চেষ্টা করলেও আম্মু হিন্দি ডায়লগটা শেষ করে তবেই থামল। আমি বললাম, মাফ চাই, তুমি যেটা বলবে, তাই সই।
আম্মু এবারে রিমোট হাতে নিয়ে বলল, ঠিক আছে, যাহ, সিরিয়াস মুভিই ছাড়ছি। মাঝপথে ঘুমিয়ে পড়লে কিন্তু থাপ্পড় খাবি। আমি বললাম, তাই বলে এত্তো বোরিং মুভি ছেড়ো না আবার। আম্মু হেসে বলল, আমার চয়েজের ওপর আস্থা রাখ।
দা কোয়াইট নামের একটা মুভি ছাড়ল আম্মু। বেশ ভাল। উল্টাপাল্টা সিন সামান্যই আছে সিনেমাটাতে, শুধু একটাই সমস্যা। মেয়েটাকে তার বাবা রেপ করে ডেইলি।
মুভিটা শেষ করে আমি বললাম, কিসব ফালতু জিনিস বানায় এরা। এটা কি কখনো সম্ভব? আম্মু গম্ভীর হয়ে বলল, দুনিয়াটা অনেক খারাপ রে। আমি তোদের সবাইকে আগলে রাখি, তাই বলে সব ফ্যামিলি একরকম না। আমি বললাম, তাই বলে এটা কি কখনো সম্ভব? আম্মু বলল, তুই ফারাওদের কথা জানিস না? ওরা তো নিজেদের ব্লাড লাইন পিওর রাখার জন্য ভাইবোনে বিয়ে করতো।
আমার একটু খটকা লাগলো। এসব কি আসলেই সত্যি? আম্মু আমাকে এসব কেন বলছে? আমার কেন যেন মনে হচ্ছে, ব্যাপারটাকে আম্মু জাস্টিফাই করতে চাচ্ছে।
মা রা আসলেই সন্তানের মনের কথা পড়তে পারে। আম্মু সাথে সাথে আমাকে বলল, ভাবিস না যে আমি আবার এসবের পক্ষে সাফাই গাইছি। আমি শুধু বলছি যে, পৃথিবীটা একটা ফাকড আপ প্লেস। অনেক কিছুই অনেকের কাছে ভাল আর অনেকের কাছে খারাপ। ভাল আর খারাপের ডেফিনেশন তো সমাজ ঠিক করে দেয়। কিন্তু সমাজ তো আর সবখানে সবসময় একই রকম থাকে না।
একসময় আমেরিকাতে কালোদের মানুষ হিসেবে গোণাই হতো না, আবার অ্যালকোহল খাওয়াও নিষেধ ছিল। এখন কি সেসব বদলে যায় নি?
বুঝতে পারলাম আম্মু এখন সোশিওলোজি নিয়ে আমাকে জ্ঞান দিতে শুরু করবে আস্তে আস্তে। সায়েন্স নিয়ে পড়লেও এ লাইনে আবার ওর ইন্টারেস্ট অনেক। নিজে থেকেই কিসব কঠিন কঠিন বই পড়ে।
আমি প্রসঙ্গ ঘোরাবার জন্য বললাম, ওহ আম্মু, ভাল কথা, তুমি কবে আবার ওয়াইন খাবে? আম্মু তবুও কি কি যেন বলে যেতে লাগল। আমি না শুনে বলে যেতে লাগলাম, শোন না, শোন না, কবে খাবে আবার? আম্মু এবার থেমে গিয়ে বলল, কেন? ভাবিস না যে তোকে খেতে দেব এখনই। তোর বয়স হয়ে ওঠে নি এখনো। বলে আবার সেই পুরনো সমাজবিজ্ঞান নিয়ে জ্ঞান ঝাড়তে শুরু করে দিল।
আরো কিছু সিরিয়াস প্যাঁচালের পর আম্মু বলল, অনেক হয়েছে এবার ঘুমাতে যা। আমি রুমে চলে এসে লিখতে বসলাম। মাথা ভোঁ ভোঁ করছে এসব শুনে।

No comments: